Book Details
সংক্ষিপ্ত বিবরণ (লেখকের ’সূচনা’ কথা থেকে): মানুষ হাজার প্রজন্ম ধরে রাতের আকাশে তাকিয়ে দেখছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তারকারাজি এবং অনুধাবন করার চেষ্টা করছে কিভাবে ওই আলোক বিন্দুগুলি সৃষ্টি হল, কত দূরেই বা তাদের অবস্থান, কিভাবেই বা আমাদের বাসস্থান এই পৃথিবী আবির্ভূত হল? বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটার পর থেকেই মানুষ আড়াই হাজার বৎসর ধরে মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করছে এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করছে, অধ্যয়ন করছে এবং তাদের পর্যবেক্ষণের সাথে মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা মিলিয়ে দেখছে। তাদের পর্যবেক্ষণে এ পর্যন্ত ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জ আবিষ্কৃত হয়েছে, প্রত্যেক নক্ষত্রপুঞ্জে ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। কত গ্রহ ওই নক্ষত্রগুলি প্রদক্ষিণ করছে তা অনিশ্চিত, তবে কেবল একটি গ্রহে জীব-বৈচিত্র্যের বিবর্তন ঘটেছে, আর তা হল এই পৃথিবী। পৃথিবীর মানুষ প্রায় আড়াই হাজার বৎসর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মহাবিশ্বের সূচনা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে।
বিগত দুই সহস্রাধিক বৎসর ধরে মানুষ গভীর প্রচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে আমরাই প্রথম এক প্রজন্ম যারা মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং বিবর্তন সম্পর্কে একটি শোভন, যৌক্তিক এবং সঙ্গতিপূর্ণ বিবরণ দেওয়ার অধিকার দাবি করতে পারি। বিগ ব্যাং মডেল মহাবিশ্বের সবকিছু- যা আমরা আকাশে দেখতে পাই, তার সূচনার রুচিশীল ব্যাখ্যা প্রদান করে, যা মানবীয় ধীশক্তির এক বিরাট বিজয়। ইহা চির-অতৃপ্ত ঔৎসুক্য, অবিশ্বাস্য অনুমান, সুক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ এবং নির্মল যুক্তি ও চিন্তার ফল।
আরও বিস্ময়কর যে বিগ ব্যাং মডেল সম্পর্কে জানতে গিয়ে বিস্ময়াভিভূত হতে হয় এর সারল্য এবং সৌন্দর্য দেখে, এবং যেসব নীতি অবলম্বন করে তা প্রতিষ্ঠিত, তার সমগ্রই বলা যায় পদার্থবিজ্ঞানের, যার অধিকাংশই সেকেন্ডারী লেভেলে পড়া হয়ে থাকে।
বিগ ব্যাং মডেলের প্রারম্ভিক চাঞ্চল্যের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে তত্ত্বের কিছু ভিত্তিমূল নিয়ে আলোচনা করা উচিত। মহাবিশ্বের বিগ ব্যাং মডেল বিগত শতকে উন্নতি লাভ করেছে। কারণ বিংশ শতাব্দীর সাফল্যগুলির ওপর জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত, যা বিগত শতাব্দীসমূহে নির্মিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মহাবিশ্বের তত্ত্ব ও পর্যবেক্ষণসমূহ এক বৈজ্ঞানিক কাঠামোর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিগত দুই সহস্রাধিক বৎসরকালে। আরও পশ্চাতে গেলে বৈষয়িক সত্য উদ্ভাবনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে তখনই, যখন শক্তি (Myth) ও লোকগাঁথার ওপর আস্থায় ভাটা পড়ে, ফলে বিগ ব্যাং মডেলের মূলভিত্তি এবং মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আগ্রহ তখন থেকেই পরিলক্ষিত হয়েছে, যখন প্রাচীনকালের পৌরাণিক উপকথার ওপর প্রতিষ্ঠিত মতবাদ স্তিমিত হতে দেখা গেছে।
বিশ শতকের শুরুতে সৃষ্টি-তত্ত্ব ছিল অনুমান নির্ভর। তারপর পদার্থবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যায় নতুন নতুন আবিষ্কার বিশ্ব-তত্ত্বকে বিজ্ঞানের এক প্রাণবন্ত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসে। সমগ্র বিংশ শতাব্দীতে সৃষ্টি-তত্ত্ববিদরা এক বিশদ ধারণার উন্নয়ন করে যা মহাবিশ্বের সূচনা এবং বিবর্তনের বিবরণ দেয়।বিগ ব্যাং তত্ত্ব নিখুঁত বা পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব নয়। বিগ ব্যাং তত্ত্ব মহাবিশ্বের উৎস সম্পর্কে আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেয় না, তাহলেও তা সর্বাপেক্ষা উত্তম ব্যাখ্যা, কোথা থেকে এ মহাবিশ্বের আবির্ভাব ঘটেছে?
১৯৯৮ এর শুরুতে নভোপদার্থবিদদের দু’টি গ্রুপ এক চমকপ্রদ ঘোষণা দেয়। মহাবিশ্ব, যা সবসময়ে প্রসারিত হচ্ছে এবং ক্রমান্বয়ে বিস্তৃতি হ্রাস পাচ্ছে মনে করা হতো, প্রকৃতপক্ষে দ্রুতগতিতে বিস্তৃতি লাভ করছে। বিজ্ঞানীরা সুপারনোভা দেখছিল, যা এক বিস্ফোরোন্মুখ মুমূর্ষু নক্ষত্রের তীব্র মৃত্যু-যন্ত্রণা, এমন এক দূরত্বে যা কখনও কোন সময়ে দেখা যায়নি। এই দীপ্তিময় অগ্নিগোলকগুলি প্রস্তাব করে যে মহাশূন্য ক্রমাগত দ্রুত প্রশস্ত হচ্ছে, এবং সময়ের সাথে ত্বরিত (accelerated) হচ্ছে। এ তথ্য মহাবিশ্বের কর্ম-প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তোলে। মহাকর্ষ- যে শক্তি মহাবিশ্বের সবকিছুকে একত্র ধরে রাখার কথা এবং এক নিয়ন্ত্রণসাধ্য কাঠামোতে ধরে রাখার কথা, নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বরং এক রহস্যজনক শক্তি (energy) মহাকর্ষকে প্রতিরোধ করছে এবং ব্যর্থ করে দিয়ে মহাবিশ্ব প্রশস্ত হচ্ছে। প্রাপ্ত এ ফলাফল যদি সত্য হয়, তাহলে পদার্থবিদদের পুনঃপরীক্ষা করা উচিত কিভাবে তারা আইনস্টাইনের সাধারণ অপেক্ষবাদ তত্ত্ব ব্যাখ্যা করবে এবং কিভাবে এ মহাবিশ্ব বিগ ব্যাং এর মুহূর্ত থেকে বিবর্তিত হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দেবে।
বিজ্ঞানীসমাজ নতুন ফলাফলে হতবিহ্বল। নতুন উপাত্ত পুরাতন ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক, সুতরাং নতুন উপাত্তের আলোকে পুরাতন ধারণার সংশোধিত হওয়া প্রয়োজন। সৃষ্টি-তত্ত্ববিদগণ মনে করে তাদের ধারণাগুলির কিছু পরিবর্তন করে নতুন উপাত্তের সাথে সংযোজন করলে বিগ ব্যাং তত্ত্বের আরও উন্নতি সাধন হবে। কিন্তু রহস্যজনক, মহাকর্ষবিরোধী উপাদান সংযুক্ত করে তারা আর এক সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা মহাবিশ্বে যথেষ্ট বস্তুর অভাব নির্দেশ করে, যা আরও বিস্ময়কর।
ঐতিহ্যগতভাবে সৃষ্টি-তত্ত্ব ধর্ম এবং দর্শনের সাথে জটিলভাবে জড়িত। কিভাবে এই বিশ্ব নিখিল সৃষ্টি হল? কেন সৃষ্টি হল? কিভাবে বিশ্ব নিখিল তার কর্ম প্রক্রিয়া সাধন করে? কত সুন্দর এই পৃথিবী, আমাদের এই সৌরজগত, এই মনাবসমাজ? এতসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একজনকে বিশ্বাস রাখতে হবে- ধর্ম, দর্শন এবং বিজ্ঞান- জ্ঞানের এ তিন শাখায় যারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন অদ্ভুত কাল্পনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাখ্যা খুঁজতে থাকে। যদিও এ গ্রন্থ ধর্ম ও দর্শনকে স্পর্শ করে, প্রাথমিকভাবে তা বৈজ্ঞানিক বিবরণ দানে সীমিত থাকবে এবং যার স্বাতন্ত্র্য উপলব্ধি করা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বিগ ব্যাং তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়েছে, আংশিক পরীক্ষা করা হয়েছে এবং গৃহীত হয়েছে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই তৃতীয়াংশে। বিগ ব্যাংয়ের সত্যতা প্রমাণের প্রচেষ্টা হিসেবে নতুন অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির, যেমন হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, যা উপগ্রহে স্থাপন করা হয়েছে, উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে আছি। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের প্রাথমিক উপাত্ত আসা শুরু হয়েছে, সৃষ্টি-তত্ত্ব এক পরীক্ষাযোগ্য বিজ্ঞানের অঙ্গ হয়ে যাচ্ছে।
সাতটি অধ্যায় রয়েছে গ্রন্থটিতে, তা হল-
প্রথম অধ্যায়: সৃষ্টি সম্পর্কিত প্রাচীন অতিকথা
দ্বিতীয় অধ্যায়: মধ্যযুগে জ্যোতির্বিদ্যা
তৃতীয় অধ্যায়: আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যা
চতুর্থ অধ্যায়: জ্যোতির্বিদ্যার তত্ত্বসমূহ
পঞ্চম অধ্যায়: মহাবির্তক
ষষ্ঠ অধ্যায়: তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ও অনিশ্চয়তা
সপ্তম অধ্যায়: বির্তকের অবসান
উপসংহারের পরে চারটি পরিশিষ্ট যোগ করা হয়েছে- শব্দকোষ, চিত্র তালিকা, গ্রন্থপঞ্জী ও নির্ঘণ্ট।
Product Specification
Title | বিগ ব্যাং ও মহাবিশ্বের আবির্ভাব |
ISBN | 978-984-8927-62-5 |
Edition | 1st |
Number of Pages | 432 |
Language | বাংলা |
Binding | পেপারব্যাক |
Paper Type | কালার অফসেট |
Paper Quality | 70 GSM |
Size | L-8.5 × W-5.5 × T-1.0 |
Weight | 0.5 kg |