Book Details
সংক্ষিপ্ত বিবরণ (অনুবাদকের কথা থেকে): আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আ-লামীন,
ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু ‘আলা আশরাফিল আম্বিয়া ওয়াল-মুরসালীন ওয়া ‘আলা
আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমা’ঈন।
কী দিয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো? তার ভাষা আমার জানা নেই!
আল্লাহর অশেষ রহমত, অপরিসীম করুণা ও নিঃসীম কৃপায় আমার এই সামান্য কর্মটুকু
প্রকাশিত হয়েছে। ওয়ালিল্লাহিল হামদ!
ছোটবেলা থেকেই ইতিহাসের প্রতি আমার আগ্রহ। ইতিহাস সম্পর্কে কোনো বই পেলে
সেটা পড়ার চেষ্টা করি। একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামের ইতিহাস জানার ইচ্ছাটাও
প্রবল। ইসলামী জ্ঞানের মৌলিক শাখাসমূহ (তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, উসূল)-এর সাথে
আরো কিছু আনুষাঙ্গিক বিষয় (লুগাহ, তারীখ, সিয়ার, তারাজিম) রয়েছে। ইসলামের
প্রথম যুগে কুরআন-হাদীস কেন্দ্রিক বিবিধ গ্রন্থ লেখা হয়। পরবর্তী যুগে
ইমামগণ ইতিহাসকেও বেশ গুরুত্বের সাথে দেখতে শুরু করেন। ইসলামের ইতিহাস ও
ইতিহাসের পাতায় বিদ্যমান মুসলিম মনীষাকে তারা বিভিন্ন গ্রন্থে তুলে ধরেন।
ইমাম ত্বাবারী রচিত ‘তারীখুল উমাম ওয়াল মুলূক’ গ্রন্থটি একটি মাইলফলক বলা
চলে। যদিও আগে-পরে আরো বেশ কিছু গ্রন্থ রচিত হয়েছে ইসলামের ইতিহাসের উপর।
ইমাম ইবন কাসীরের জগদ্বিখ্যাত বই ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’ সম্পর্কে সবাই
কম-বেশি জেনে থাকবেন। এ বইগুলোকে দুটো ভাগে বিভক্ত করা যায়, তারীখ (ইতিহাস)
ও সিয়ার (মনীষীদের জীবনী)।
আমার জীবনাকাশে তিনজন আলেম উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে জ্বলজ্বল করে সর্বদা।
ইবনু তাইমিয়্যা, ইবনুল কাইয়্যিম ও যাহাবী –রাহিমাহুমুল্লাহ-। এদের রেখে
যাওয়া লিখনী আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথে চলতে
সহায়তা করেছে। আল্লাহর কাছে চাই, তাদেরকে যেনো জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান
করেন।
ইমাম যাহাবী আমার কাছে এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। তার বই যতো পড়েছি, তার
চিন্তাধারা ও মানহাজকে যতো জানছি, ততোই তার প্রতি আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধা
বেড়েছে। ইমাম যাহাবীকে চিনেছি ‘সিয়ারু আ-লামিন নুবালা’ গ্রন্থটির মাধ্যমে।
তার পরিচিতি মূলত মুহাদ্দীস হিসেবে। উলুমূল হাদীসের একজন দিকপাল হিসেবে
আলেমগণ তাকে জানেন। এ বিষয়ে তার রচিত ‘তাযকেরাতুল হুফ্ফায’, ‘মীযানুল
ই’তিদাল’, ‘আল-মুঈন’, ‘আল-মুগনী’, ‘আল-কাশেফ’, ‘তাযহীবুত তাহযীব’-সহ বিবিধ
গ্রন্থ তালিবুল ইলমগণ অবশ্যই জেনে থাকবেন। হাদীসশাস্ত্রে যে কোনো হাদীসের
বর্ণনাকারীদের গ্রহণযোগ্যতার ‘মান ও স্তর’ পর্যালোচনায় ইমাম যাহাবীর অবদান
অনস্বীকার্য।
আকীদার ক্ষেত্রে ইমাম যাহাবী রচিত ‘আল-উলূ’ ও ‘কিতাবুল আরশ’ প্রমাণ বহন করে
যে, তিনি সালাফ-সালিহীনের আকীদাকেই নিজের আকীদা হিসেবে ধারণ করতেন। এছাড়া
তার রচিত ‘কিতাবুল কাবায়ের’-এ কবীরা গুনাহসমূহের একটি তালিকা করেছেন তিনি,
যা বাংলায় অনূদিত হয়েছে এবং বইটি পাঠকমহলে সমাদৃত।
ইসলামের ইতিহাসের ক্ষেত্রে তার অনন্য রচনা ‘তারীখুল ইসলাম’। আর মুসলিম
মনীষার জীবনী বিষয়ে তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘সিয়ারু আ-লামিন নুবালা’। এই যে
দুটি বই! এগুলো অতুলনীয়। আজ পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাসে যতো কাজ হয়েছে,
তন্মধ্যে একজন আলেম কর্তৃক সেরা কাজ হিসেবে এ দুটিকে বিবেচনা করাটা
বাড়াবাড়ি কিছু নয়।
‘সিয়ারু আ-লামিন নুবালা’ বইটি পঁচিশ খণ্ডের এক বৃহৎ গ্রন্থ। ‘দারু ইবন
হাযম’ ও ‘দারুল আন্দালুস আল-খাদ্বরা’ নামে সৌদি আরবের দুটি পাবলিকেশন্স
থেকে এটি প্রকাশিত। লেখক নিজের সময়কালের পূর্ব পর্যন্ত যতো মনীষী পেয়েছেন,
তাদের সকলের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। কারো জীবনী ছিলো কেবল
নাম, বংশ ও মৃত্যুর সনে সীমাবদ্ধ। মূলত এ বইটিকে একটা বিশ্বকোষ বললে
অত্যুক্তি হবে না। বইটি থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হওয়ার সুযোগ ছিলো না। সে
কারণেই সৌদি আরবের শাইখ মুহাম্মাদ মুসা আশ-শরীফ এ দীর্ঘ কিতাবকে নিয়ে
এসেছেন মাত্র চার খণ্ডে। তাহলে কি সব বাদ পড়ে গেলো? না! যাদের জীবনী থেকে
শিক্ষণীয় কিছু পাওয়া গেছে, তাদেরকেই তিনি অন্তর্ভুক্ত করে সাজিয়েছেন
সংক্ষিপ্ত বইটি। নাম দিয়েছেন ‘নুযহাতুল ফুদালা’। মূল বইটিতে চার খলীফার
জীবনী নেই, তাই ‘তারীখুল ইসলাম’ গ্রন্থ থেকে সেটুকু নিয়েছেন। তারপর
সাহাবীদের থেকে শুরু করে শেষ নাগাদ এসেছেন। বইটির সংক্ষিপ্তরূপ বেশ কয়েক
বছর আগেই প্রকাশিত হয়েছে সৌদি আরব থেকে।
বাংলায় সালাফদের জীবনী বিভিন্ন বইয়ে পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে যে বইটি
মোটামুটি রেফারেন্স বুক বলা চলে, সেটা হলো এই ‘সিয়ারু আ-লামিন নুবালা’।
তবে এতো বিশাল বই থেকে সাধারণ মানুষের হৃদয়ের খোরাক কতটুকু তা শাইখ
মুহাম্মাদ মুসা আশ-শরীফ হয়তো ধরতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সংক্ষিপ্ত করে
প্রয়োজনীয় অংশগুলো রেখে দিয়েছেন। ২০১৬ সালের কোনো এক বিকেলে সম্মানিত পিতা ও
শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের পরামর্শে বইটির অনুবাদ কাজে হাত দিই। অবশেষে ‘মহৎ
প্রাণের সান্নিধ্যে’ নামে বইটির দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হতে যাচ্ছে কয়েক বছর
পরে। আল্লাহর রহমতে ধীরে ধীরে কাজ
এগিয়ে চলেছে। দোআ চাই, মহান আল্লাহ যেনো সবটুকু অনুবাদের তাওফীক দেন।
বিশ্বাস করুন ভাই-বোনেরা, বইটি এতোই অসাধারণ, আমি বলে বুঝাতে পারবো না, কী
রয়েছে এতে! যদি আপনারা পড়ে না দেখেন। বইটির বেশ কিছু পাতা আমাকে ভাবিয়েছে,
কিছু পাতা আমার চোখে পানি এনেছে, কিছু জীবনীর সাথে নিজের জীবনকে তুলনা করে
আফসোস করেছি, কতোই না পিছিয়ে আছি আমরা। আমাদের আদর্শ, আমার কাছে যারা হিরো,
তাদের জীবনাচরণ অনুসরণে কতোই না পিছিয়ে। আমরা কি তাদের নাগাল পাবো? তাদের
মতো আমরাও কি আল্লাহর কাছে কবুল হবো? আল্লাহ ভালো জানেন!
বইটি প্রকাশ করতে সম্মত হয়েছেন সবুজপত্র পাবলিকেশন্স’র মুহাম্মাদ হেলাল
উদ্দীন আঙ্কেল। তাকে জানাই অগণিত শুকরিয়া। এতে বহু সংশোধনী ও পরামর্শ
নিয়েছি, আমার অগ্রজ জনাব আব্দুর রহমান ভাইয়ার নিকট থেকে। বইটির সম্পাদনা
করে দিয়েছেন, আমার শ্রদ্ধেয় আব্বা প্রফেসর ড. আবুবকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া।
আল্লাহ তাদেরকে নেক হায়াত দান করুন। আমীন!
একজন অনুবাদক হিসেবে আমার কী চাওয়া? আমার আসলে তেমন কোনো চাওয়া নেই; আমি
ইমাম যাহাবীকে ভালোবাসি হৃদয়ের গভীর থেকে, তার জন্য জান্নাতের দোয়া করি।
আরো দোয়া করি, আল্লাহ যেনো এ বইটিকে তার জন্য কবুল করে নেন। কিছুদিন পরই তো
এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবো, কবরের দীর্ঘ জীবনে কীভাবে থাকবো জানি না। এ
গুনাহগারকে যেনো বইটির উসীলায় ক্ষমা করে দেন মহান আল্লাহ তাআলা। আমাকে যেনো
কবুল করেন জান্নাতের জন্য। হয়তো কোনো একদিন জান্নাতের বাগিচায় দেখা হয়ে
যাবে ইমাম যাহাবী রাহেমুহুল্লাহ’র সাথে। মুচকি হেসে সালাম বিনিময় করে বলতে
পারবো, ‘আপনাকে ভালোবেসে আপনার বইটা পৌঁছে দিয়েছিলাম দামেস্ক থেকে সেই
সুদূর বাংলায়।’ তিনিও হয়তো আমাকে কাছে টেনে বসাবেন। এরপর মেতে উঠবো অনন্ত
বাতচিতে, যার কোনো শেষ নেই, কোনো সমাপ্তি নেই। আমরা সেই প্রশান্তির অসীম
জীবন কামনা করতেই তো পারি, তাই না?
Product Specification
Title | মহৎপ্রাণের সান্নিধ্যে - দ্বিতীয় খণ্ড |
ISBN | 978-984-97017-4-3 |
Edition | 2nd |
Number of Pages | 368 |
Language | বাংলা |
Binding | হার্ড কভার |
Paper Type | কালার অফসেট |
Paper Quality | 80 GSM |
Size | L-8.5 × W-5.5 × T-1.0 |
Weight | 0.4 kg |