Book Details
সংক্ষিপ্ত বিবরণ (অনুবাদকের কথা থেকে): মহাগ্রন্থ আল কুরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কথা। জিবরাঈল আমীনের মাধ্যমে এটি তিনি তাঁর বান্দাহ ও রাসূল মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহর উপর নাযিল করেছেন। কুরআন লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত মহা পবিত্র গ্রন্থ; একমাত্র পবিত্ররা ছাড়া আর কেউ যা স্পর্শ করতে পারে না। এটি মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় নিয়ামত, তাদের হেদায়াতের দিশারী, মুক্তির আলোকবর্তিকা, জীবনচলার পাথেয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুরোধা এবং পুণ্যার্জনের পথ। এই কুরআনের মাধ্যমেই আল্লাহ কাউকে সম্মানিত করেন, আবার কাউকে করেন লাঞ্ছিত ও অপমানিত। আসমান ও জমিনে এর চেয়ে শুদ্ধতম আর কোনো গ্রন্থ নেই। কোনো দিক থেকেই বাতিল একে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। এটি সম্মানিত ও বিজ্ঞানময়। মিল্লাতে ইবরাহীম ও উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য এটি জীবনবিধান, হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী, বুরহান, নূর এবং শিফা।
কুরআন সমগ্র মানবজাতির জন্য নাযিল করা হয়েছে। কিন্তু এটি নাযিল হয়েছে আরবী ভাষায়। কুরআন বোঝা, একে উপলব্ধি করা এবং জীবনচলার পথে একে অনুসরণ করা সবার জন্যই জরুরি। দেশ-জাতি ও ভাষার ভিন্নতা এর অনুসরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। মুসলিমদেরকে কুরআন পড়তেই হবে, বুঝতেই হবে, মানতেই হবে। কারণ এটিই তাদের দীন। তাদের শরী‘আত ও মানহাজ। আর এ জন্যই মহান রব তাঁর এ মহা পবিত্র গ্রন্থটিকে সহজ করে নাযিল করেছেন। বার বার বলে দিয়েছেন, ‘আমি কুরআনকে সহজ বানিয়েছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারো।’ কঠোর ধমকি ও সতর্কবাণী দিয়ে রেখেছেন তাদেরকে; যারা কুরআন নিয়ে ভাবে না, চিন্তা-গবেষণা করে না। যেহেতু সব ভাষার সকল মানুষের পক্ষে আরবীকে যথাযথভাবে আয়ত্ত করে কুরআন বোঝা সম্ভব নয়, সেহেতু আল্লাহ সকল ভাষাভাষীদের জন্য তাদের স্ব স্ব ভাষায় এটি অনূদিত হওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বস্তুত, এটিই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সুন্নত। এভাবেই তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য হেদায়াত লাভের পথ সুগম করে দেন।
কোনো বক্তব্য বা কথাকে ভাষান্তর করা, এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় নিয়ে যাওয়া এমনিতেই কঠিন কাজ। কারণ, উদ্ধৃত কথা বা বক্তব্যটুকু সামনে থাকলেও এর পেছনে মূল কথক বা বক্তার অন্তর্গত ভাবনা, উদ্দেশ্য, তাৎপর্য কিংবা অভিব্যক্তি সব সময় তাতে ফুটে উঠে না। ফলে অনুবাদকের জন্য সেগুলোকে অনুধাবন করে নিয়ে অনূদিত ভাষায়ও তা ধরে রাখা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণ মনুষ্য রচিত কোনো কিছুর ক্ষেত্রেই যদি এমন হয়, তাহলে মহান আল্লাহর বাণী মহাগ্রন্থ আল কুরআনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরো বহু গুণ কঠিন হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। কুরআনের মূল ভাষ্যের মধ্যে যে পূর্ণতা, শব্দশৈলী ও বাক্য গঠনে যে অপার্থিব সৌন্দর্য, উপমা কিংবা উপদেশ প্রদানের যে অচিন্তনীয় কারুকার্য; এসবের সাথে পাল্লা দেয়ার ক্ষমতা কোনো মানুষের নেই। কারো পক্ষেই এ দাবি করা সম্ভব নয় যে, সে কুরআনের সমুদয় অর্থ-উদ্দেশ্য-হিকমত পূর্ণভাবে অনুধাবন ও আয়ত্ত করতে পেরেছে এবং অন্য কোনো ভাষায়, অন্য শব্দমালা ব্যবহার করে সে আল্লাহর বাণীকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবে। এতদসত্তে¡ও; যেহেতু কুরআনকে বুঝতে হবে, মানতে হবে, এর হুকুম-আহকাম উপলব্ধি করে তা সবার নিকট পৌঁছে দিতে হব। এ তাগিদে যুগ যুগ ধরে মনীষীগণ কুরআনের তরজমা ও তাফসীর করে আসছেন। বিভিন্ন ভাষার মানুষদের থেকে আল্লাহ ঠিকই কাউকে না কাউকে কুরআনের ভাষান্তরের জন্য প্রস্তুত করে তুলেছেন। তাদের প্রতি দয়া করেছেন। তাদেরকে এই মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার তাওফীক দিয়েছেন। ওয়ালিল্লাহিল হাম্দ।
এই পবিত্র গ্রন্থখানির অনুবাদের আকাক্সক্ষা বহুদিন থেকেই আমার অন্তরে ছিল। বিশেষ করে, অন্যান্য অনুবাদ গ্রন্থের কাজ করার সময় যখনই কুরআনের আয়াতসমূহ সামনে আসতো, আকাক্সক্ষাটা জোরদার হয়ে উঠতো যে, কিছু কিছু আয়াতের অনুবাদ করার চেয়ে পুরো কুরআনের অনুবাদ করে ফেলার তাওফিক যদি আল্লাহ আমায় দিতেন! আকাক্সক্ষা ছিল, লোভ ছিল, কিন্তু একটু একটু করে হিম্মত জুটিয়ে উঠার যে ব্যাপার সেটা অনুপস্থিত ছিল। শেষ পর্যন্ত মহান রব সেই তাওফিকটুকু দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, আল্লাহর এই কালামের সর্বস্বত্ব শুধুই তাঁর। কাকে তিনি এ থেকে কতটুকু দেবেন, সেটাও তাঁরই ইচ্ছা। কুরআন হিফয করার সময়ই এ বিষয়টি আমি আক্ষরিকভাবে অনুধাবন করেছিলাম যে, জোর করে কেউ কুরআনের কিছু আয়ত্তে নিতে পারে না। আল্লাহর ইচ্ছা, তাঁর দয়া ও রহমতই এখানে মূল নির্ণায়ক। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা আমাকে এ তাওফিক দিয়েছেন, এর শুকরিয়া আদায়ের তাওফিকও যেন তিনি আমাকে দেন। আল্লাহুম্মা আমীন।
ইতঃপূর্বে অনেকেই বাংলা ভাষায় কুরআনের অনুবাদ করেছেন। কেউ সরাসরি কুরআন থেকে, আবার কেউ অন্য ভাষার অনুবাদ থেকে ভাষান্তরের এই কাজ সম্পন্ন করেছেন। আল্লাহ তাদের খিদমত কবুল করুন। পূর্বোক্ত অনুবাদসমূহের উপস্থিতি সত্তে¡ও আমাদের এই অনুবাদটি বাংলা ভাষায় অনূদিত কুরআনের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মহান আল্লাহ আমাদের এই খেদমতটুকু কবুল করুন।
অত্র অনুবাদ পাঠের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়
১. সর্বস্তরের বাংলা ভাষাভাষীদের কথা বিবেচনায় রেখে আনুবাদটি করা হয়েছে। অনুবাদের জন্য ভাষাকে এতটুকু সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে; যাতে ন্যূনতম পড়তে পারেন, এমন কেউ-ও এর থেকে উপকৃত হন। পাশাপাশি ভাষার মানকে এমন একটি উচ্চতায় রাখা হয়েছে, কুরআনের অনুবাদের ভাষার জন্য যা উপযুক্ত ও সমীচীন।
২. অনুবাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন বিশুদ্ধ তাফসীর নজরে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হলো- তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে কুরতূবী, তাফসীরে জালালাঈন, আইসারুত তাফাসীর, আত্-তাফসীরুল মুয়াস্সার, তাফহীমুল কুরআন, তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন। এসব মহান খেদমতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা ও দুআ রইলো।
৩. কুরআনের যেসব শব্দ বা পরিভাষা বাংলাতেও একইভাবে প্রচলিত, সেগুলো অনুবাদ না করে মূল শব্দই রাখা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত শব্দের ক্ষেত্রে ব্র্যাকেটের মধ্যে অর্থ লিখে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ফুটনোটে টীকার মাধ্যমে অর্থ বা উদ্দেশ্য পরিষ্কার করা হয়েছে।
৪. পাঠকরা যাতে আয়াতের অর্থ পুরোপুরি বুঝে নিতে পারেন, সর্বাবস্থায় সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ জন্য যেখানেই অর্থ বুঝে নিতে জটিলতা দেখা দেয়ার সামান্য আশঙ্কাও মনে হয়েছে, সেখানেই ব্র্যাকেটের মধ্যে সহজভাবে তা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, কুরআনের মূল কোনো শব্দ বা আয়াতের অর্থ ব্র্যাকেটের মধ্যে রাখা হয়নি। আবার বাড়তি সংযোজিত কোনো শব্দ বা বাক্য মূল অনুবাদের সাথে জুড়ে দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে ব্র্যাকেটে সংযোজিত বাড়তি শব্দসমষ্টি মূল বাক্যের সাথে মিলিয়ে পড়তে যেন অসুবিধা না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। অনুরূপ, ব্র্যাকেটের শব্দসমষ্টি ছাড়াও যাতে মূল বাক্যের অর্থ বোধগম্য হতে পারে, সেদিকেও মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
৫. আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবী-রাসূলদেরকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে পুরো অনুবাদেই ‘আপনি’ ব্যবহার করা হয়েছে। নবী-রাসূলদের সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদেরকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে অবস্থা-অবস্থান ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘আপনি’ বা ‘তুমি’ ব্যবহৃত হয়েছে। পুরো অনুবাদের কোথাও তুই/তোরা ব্যবহার করা হয়নি।
৬. কুরআনের যেসব স্থানে বিভিন্ন আকীদাসংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচিত হয়েছে, অনুবাদের সময় সেখানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদাকে সতর্কভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আসমা ওয়াস সিফাতের অনুবাদের বেলায়ও অনুরূপ।
৭. পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নিজের ক্ষেত্রে বহুবাচক সর্বনাম তথা ‘আমরা’, ‘আমাদের’ ব্যবহার করেছেন। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার একচ্ছত্র আধিপত্য, রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশালত্ব বিবেচনায় অনুবাদের সময় এসব স্থানে ‘আমি’, ‘আমার’ ব্যবহার করা হয়েছে।
বস্তুত, আল্লাহর তাঁর নিজের ক্ষেত্রে এই যে বহুবাচক সর্বনামের ব্যবহার- এটি কোনোভাবেই কোনো কিছুতে তাঁর সাথে কেউ বা কারো অংশীদারত্বের সূচক নয়। এটি একান্তই তাঁর বিপুল ও বহুমুখী শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। তিনি একই সঙ্গে স্রষ্টা, রিযিকদাতা, লালন-পালনকারী, জীবন ও মৃত্যুদাতা। তিনি রাজাধিরাজ, পরাক্রমশালী ও সকল মর্যাদার আধার। কোনো কিছুই তিনি কারো সাহায্য নিয়ে করেন না। তাঁর সক্ষমতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সামষ্টিকতার দৃষ্টিকোণ থেকেই আল্লাহ তাঁর নিজের শানে এভাবে বহুবাচক সর্বনাম ব্যবহার করেছেন। অনুবাদের ক্ষেত্রে আমরা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও একক কর্তৃত্বের সম্মানে তাঁর জন্য একবচন সর্বনাম গ্রহণ করেছি।
অনুবাদটি সম্পাদনা করেছেন আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা ও উস্তাদ, হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান মাদানী। কুরআন সংশ্লিষ্ট যে কোনো কাজের জন্য একজন ব্যক্তিকে শুধু আলেম নয়, সাথে সাথে হাফেয হওয়াও জরুরি বলেই আমি মনে করি। পাশাপাশি, আরবী ব্যাকরণ, ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষতা এবং আকীদার বিশুদ্ধতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মুহতারাম সম্পাদকের মাঝে এ সবগুলোর সমাহার এ কাজের জন্য তাঁকে সবচেয়ে উপযুক্ত করে তুলেছে। তিনি যে মূল্যবান সময় ও শ্রম দিয়েছেন, আল্লাহ তা কবুল করুন।
অনুবাদটি প্রকাশ করেছেন, মুহতারাম হেলাল উদ্দীন। সব ধরনের মৌলিকত্ব ও বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি তার ঐকান্তিক আগ্রহেরই আরেকটি ফসল এই অনুবাদ। কুরআনের এই খিদমতের পেছনে তিনি ও তাঁর পরিবার যে আন্তরিকতা ও মেহনত খরচ করেছেন, আল্লাহ তার উত্তম প্রতিদান তাদেরকে দিন।
ভুল মানুষই করে, এ থেকে কেউ মুক্ত নয়। মানুষ হিসেবে আমিও অন্য সবার মতোই দুর্বল। আমার এ প্রচেষ্টায় নিজের অক্ষমতাবশত ও অনিচ্ছাকৃত যেকোনো ভুলের জন্য আমি প্রথমেই আল্লাহর দরবারে, তারপর সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মুদ্রণজনিত ভুল-ত্রæটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই সকল ব্যাপারে সুধি পাঠকবৃন্দের যে কোনো পরামর্শ কিংবা সংশোধনী সাদরে আমন্ত্রিত।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার এই প্রচেষ্টাটুকু কবুল করে নিন। সেই কঠিন দিবসের জন্য আমার হিসেবের খাতায় এ আমলটুকু যোগ করে দিন। আমার বাবা-মাসহ সমস্ত মুসলিম নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন... আমীন।
Product Specification
Title | আল-কুরআনুল কারীম: বাংলা অনুবাদ |
ISBN | 978-984-8927-63-2 |
Edition | 2nd |
Number of Pages | 768 |
Language | বাংলা - আরবী |
Binding | হার্ড কভার |
Paper Type | কালার অফসেট |
Paper Quality | 70 GSM |
Size | L-9.5 × W-6.5 × T-2.0 |
Weight | 1.3 kg |